Friday, November 4, 2022

কসমিক


একটা রঙিন উজ্জ্বল বিস্ফোরণ থেকে 

ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলো ক্ষুদ্র কিছু কণা ।

যারা একসঙ্গে হয়ে এখন আমাদের সূর্যের সামনে দাঁড়াতে ভয় পায় ।


অথচ আমাদের সূর্য জানে, 

তার থেকেও বড় এবং বেশি উষ্ণ নক্ষত্র 

যখন নীল হয়ে জ্বলছিলো 

তখন আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম সেই সুপারনোভার ভেতর;


ঘুরতে ঘুরতে ছিটকে বেরিয়ে পড়ার সময় কি বুঝতে পেরেছিলাম ?

একদিন এই সবুজ ঘাসের নীচের শেকড় দিয়ে আমরা মাটি কামড়ে বসে থাকবো !

আমরা চলে আসবো সাগরের গভীরে,

কোন একটা প্রবাল হয়ে 

অথবা শিকার খুঁজতে থাকা একটা হাঙর হয়ে ?


আমাদের কি তখন ইচ্ছে করেছিলো ইলেকট্রিক ঈল হয়ে 

শত্রুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলার ?

যা এখনো চেষ্টা করেও আমরা পারিনি !


আমাদের বাবা-মা যখন আমাদের এই পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য 

প্রস্তুত হচ্ছিলেন 

তখনও আমরা যে তাদের ঘরের একটা মাকড়সা 

অথবা ছোট্ট কালো কিংবা লাল পিঁপড়া হয়ে ঘুরে বেড়াবো, 

সেই নীল তারা বোধহয় জ্বলে পুড়ে উঠার আগ মুহূর্তে সেটা জানতো ।


হয়তো সে জানতো আজকের এই মৃত নগরে 

তারই দেহের অংশগুলো পুরতে থাকবে 

আরো একটি বিস্ফোরণে ছাই হয়ে হয়ে যাবার পূর্ব পর্যন্ত ।


অথবা

 

এরপর আবারো চলে যাবো আমরা অন্য কোন সূর্যের কাছে, 

আবারো বিস্ফোরণের আহ্বানে ।


আর এভাবে চলতে থাকবে অনন্তকাল ধরে ।


আমরা কি ঘুরে বেড়াচ্ছি সেই অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাবার জন্য?

পথ খুঁজে পাবার জন্য বারবার ফিরে আসছি,


একবার আমি হয়ে, 

একবার আমার মা হয়ে, 

ঠিক যেভাবে আমার বাবা চলে গেছেন 

আবারো ফিরে আসবার জন্য একটা গাছ হয়ে 

অথবা তুমি হয়ে ?


- মুক্তি 

২৫শে এপ্রিল ২০২২





Tuesday, November 1, 2022

দে জা ভ্যু





বাদামি হ্যাট মাথায়

মুখটা দেখা যাচ্ছে না

আমার বুকের দিকে একটা বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে

ট্রিগারে চাপ পড়া মাত্রই

বুকের পাঁজর ভেঙে বেরিয়ে আসে

একটা বিশালাকার প্রজাপতি, হলুদ, কালো ডোরাকাটা; 

কোকিলের মতোন একটা লেজও আছে ।

মাটির ওপর পড়ে যাচ্ছে এই প্রজাপতি বহনকারী দেহ 

প্রথমে চুল, তারপর ঘাড় এবং পিঠ;

মাটির আঘাতে ব্যথা পাবার কথা

অথচ কি আশ্চর্য আরাম !


শেষের সাত মিনিট রুক্ষ ত্বক ফেটে হাঁসি বেরিয়ে আসছে 

মনে পড়ে যাচ্ছে আমি কেমন করে

একটা তিমির পেট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম,

ছোট মাছ বলে আমার সেদিন বেরিয়ে আসা হলো না, 

আমার মনে পড়ে যাচ্ছিলো

বেঁচে যাওয়ার জন্য কি দ্রুত ছুটেও পালাতে পারিনি,

আমার গলা ছিঁড়ে ঠিকই শিকার করে নিয়ে

তার শাবকদের খাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলো সেই বাঘ;

এরপরও থেমে থাকেনি পৃথিবীর মানুষেরা,

এত পাখি এসে বসতো আমার গায়ে, হাতে, পায়ে, চুলে,

আমার ছায়ায় বসে একজন বই পড়তো রোজ,

গভীর শেকড় পর্যন্ত মানুষেরা যেতে না পারলেও

কান্ডের মাঝ থেকে কেটে ফেলে দিয়ে

আমার অর্ধেক শরীর পাঠিয়ে দিয়েছিলো

ফার্নিচারের ফ্যাক্টরিতে ।

অবশিষ্ট অংশে হয়েছিল একটা মন্দির,

কাটা শরীরের ওপর নানান রকম ফুল, শিদুর দিয়ে

পুজোর আয়োজন হতো ।


তিন মিনিট চলে গেল,

আমার মনে পড়ছিলো কি করে আমি মরে গেছিলাম এর আগেও বহুবার ।

সাদা জামা পড়ে শিউলি আর বকুল ফুল কুড়োনোর কথা আমার মনে পড়ছিলো

শেষ এক মিনিট এর আগের তিন মিনিট,

আমার মনে পড়ছিলো জীবন্ত সেই সময়ের কথা,

সন্ধ্যায় মাঠ থেকে সূর্যাস্ত না দেখে তখন বাড়ি ফিরতে ভালো লাগতো না, 

আরো কিছুক্ষণ এই সময়টা দেখতে চাইলেও

শেষ এক মিনিট চলে আসে;


আমার মনে পড়তে থাকে

হ্যাট পড়া লোকটার হাতের বন্দুকটা আমি আগেও বোধহয় দেখেছি !

এই সময়টাতে আমি আগেও বোধহয় এসেছি, 

ঠিক এভাবেই একটা প্রজাপতি বেরিয়ে চলে গেছিলো

আমার বুকের পাঁজর ভেঙে !


এই মুহূর্ত আমি কত হাজার বার যে ঘুরে গেছি,


ছোট্টবেলায় প্রজাপতিটার পেছন পেছন দৌড়ে

তাকে ধরে জামার ভেতর পুরে ফেলেছিলাম ।

সেই আনন্দে,

মরে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে

আমার রুক্ষ ত্বক ফেটে হাঁসি বেরিয়ে আসছিলো ।

এলবাট্রসের মৃত্যু

               

দক্ষিণে দীর্ঘ সময় ধরে উড়ে বেড়াতে বেড়াতে 

খেয়াল করলাম সমুদ্রের ঢেউ থেকে সুর ভেসে আসছে ।

আমার পালকের সঙ্গে বাঁধা পড়ে প্রতিধ্বনি যাচ্ছে আবার ঘোড়া দুটির কানে; 

যাদের নাচের সুর আমি শুনতে পাচ্ছি ।

ওরা নাচে সারা সমুদ্র জুড়ে শান্ত ভাবে ।

এই চুপচাপ ভঙ্গিমা ওদের এই পৃথিবীর সবচেয়ে 

নিরীহ  প্রাণী হিসেবে যখন আমাদের সামনে 

উপস্থাপন করতে ব্যাস্ত 

তখন ওরা ভেতরে ভেতরে সাঙ্ঘাতিক হয়ে উঠতে শুরু করে ।

আমি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ভীত হই 

ওদের নাচের করুন মধুর সুরে ।

পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিশাল আকৃতির উড়ন্ত পাখির 

আখ্যায় আখ্যায়িত এই শরীর ভারি হয়ে উঠতে শুরু করে ।

ক্ষুধার তীব্রতায় আমার দৃষ্টি ভ্রমে পরিণত হয় ।

একটা মাছ আমি দেখতে পাই এই প্রবল দৃষ্টি শক্তির বলে ।

ছুটে গিয়ে আমার শিকার তুলে নেব আমার ঠোঁটে 

যা আমার এত বছরের শান দেওয়া নিখুঁত অস্ত্র,

শিকার তুলে নিতে যার এতটুকু দ্বিধা হয়নি কখনো ।

ঘোড়াদের নাচের সুর আরও নৃশংস হয়ে ওঠে 

ভীত হয়ে আমি দ্রুত মাছটা নিয়ে পালাতে যাই ।

আমার ঠোঁট টা সমুদ্রের ভেতর প্রবেশ করতেই

গলায় আটকে যায় মানুষের ফেলে রাখা ধারালো ছিপ

যেটিকে আমি মাছ ভেবে ছুটেছিলাম তীব্র বেগে ।


মাত্র একশো ত্রিশ ফিট

একশো ত্রিশ ফিট,

সামান্য উচ্চতা ।

সামান্য এই উচ্চতায় উঠে আপনার যখন মনে হবে,

আমি চাইলে এখন আমার শেকড় উপড়ে ফেলতে পারি,

আপনি তখন উপড়ে ফেলতেই পারেন,

আপনার উচ্চতায় হয়ত কেউ নেই এমন

যে আপনাকে মৃত্যুর পথ থেকে ফেরাবে,

বরং আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে ফেলার শক্তি

তখন অনেকের আছে ।

আপনার অহম, ক্রোধ এবং লালসা

যখন এদের সর্ব উচ্চতায় পৌঁছে গেছে

তখন আপনি মাত্র একশো ত্রিশ ফিট উপরে ।

সামান্য উচ্চতা ।

অথচ আপনার মনে হবে

এত উঁচুতে বসে চাইলেই আমি

এখন একটা মানুষের হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারি,

কারন আপনার তখন ভীষণ ক্ষুধা ।

যা খেলে আপনার ভালো লাগবে

তাই আপনি খেয়ে ফেলতে পারেন

কারণ আপনার ভালোলাগাটাই এখানে মুখ্য,

এবং অবশ্যই কোন ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন নেই ।


আপনার অহম এর উচ্চতাও এখন একশো ত্রিশ ফিট ।

সামান্য উচ্চতা ।

এত সামান্য উচ্চতায় উঠেই আপনি মানুষের হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারেন,

আপনার ভেতর এখন ক্ষমতা এবং লালসা দুটোই ভর করেছে

আপনি চাইলেই এখন সব ভেঙ্গে গুরিয়ে দিতে পারেন ।

ধ্বংসের পৈশাচিক আনন্দে আপনি মেতে উঠতেই পারেন ।


আরও বেশি উচ্চতার স্বাদ আপনি হয়ত পেতেও পারতেন,

যদি না এই সামান্য উচ্চতায় উঠেই নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যেতেন ।


আপনার ক্ষুধা মিটিয়ে নেবার পর,

মুহূর্তকে আলিঙ্গন করে নেবার পর

ধ্বংসস্তূপের উপর যখন আপনি বসে আছেন,

শান্তি পাচ্ছেন ?